ভাত এর যত পদ নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে রেনুক দেবী চৌধুরীর নাম। তিনি তার বই “রকমারি নিরামিষ রান্না” নামক বইতে খুবই চমৎকার করে লিখেছে – আমার এক অতিপ্রিয় আত্মীয়, আবার বন্ধুও বটে, বলেন: ‘ভাত রান্নাই সব থেকে কঠিন।’ সত্যিই তাই। পাকা রাঁধুনিরও ভাত রান্না অনেক সময় ঠিকমতো হয় না, বেশি গলে যায়। অবশ্য আতপ চালেই বেশি গণ্ডগোল। সিদ্ধ চালের ভাত বড় বেশি খারাপ হয় না। আজকাল তো কতভাবেই ভাত রান্না হয়। ‘প্রেশার কুকার’, ‘ইকনমিক কুকার’, ‘রাইস কুকার’-এর সাহায্যে ভাত রান্নার কত ব্যবস্থাই হয়েছে। দু-চার দিন রান্না করে অভিজ্ঞতা হয়ে গেলে আর অসুবিধা হবে না।
সিদ্ধ চালের ভাত খাওয়ার পর যদি বেঁচে যায়, পর দিন যখন ভাত রাঁধবে প্রয়োজন মতো চাল ধুয়ে জল, চাল ও ভাত একত্রে উনুনে বসিও। ভাত বেশ সিদ্ধ হলে নামাবে। আগের দিনের ভাত গলে যাবে না।
আতপ চালের ভাতও এইভাবে হয়, তবে একটু অসাবধান হলেই ভাত গলে গিয়ে খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আতপ চাল ছাড়তে হয় ফুটন্ত জলে। চালের খুদ ভাতে থাকলে ভাত খারাপ হয়ে যায়।
দিনের ভাত রাত্রে খাওয়ার ব্যবস্থা করলে ভাতের পাত্র ঢেকে গরম জলে হাঁড়ি বসিয়ে ভাত গরম করে খেতে দিয়ো। এই ভাত টাটকা ভাত বলেই মনে হবে।
ভাত বেশি থেকে গেলে ভাত ভাজা বা ওই রকম কিছু করে দিলে ভালই হয়। আতপ চালের ভাত বেশ চটকে চপের মতো করে ভেজে চায়ের সঙ্গে দিলে ভাল লাগে। এইভাবে অপচয় যাতে না হয় সেদিকে নজরে রেখে, রুচিমতো নানা পদ তৈরি করে পরিবেশন করলে রাঁধুনি গৃহিণী সকলেরই মন খুশি হয়।
Table of Contents
ভাত এর যত পদ
১। গমের দালিয়া
প্ৰণালী: চাকিতে গম ভাঙিয়ে এনে আটা চালনিতে চেলে নিয়ে আটা বার করে নাও। গমের ভাঙা খুদগুলি ছোট-ছিদ্রের চালনির ভেতর দিয়ে প্রথমে চেলে নিলে, সুজির মতো দানা বেরোবে। এই দানাতে পায়েস ভাল হয়। মোটা ছিদ্রের চালনি দিয়ে আবার চালো, তখন মাঝারি দানা বেরোবে। এই দানাতে খিচুড়ি ও ফেনাভাত হয়, একে ‘দালিয়া’ বলে।
২। খুদের জাউ
পল্লীগ্রামে যাদের নিজের জমির ধান আছে, সেইসব গৃহস্থ জাউ রাঁধতে সবাই জানে। ধান ভেঙে চাল বার করার পর যখন তুয্ কুঁড়া ইত্যাদি ঝেড়ে ফেলা হয়, তখন কুলোর আগায় টেনে টেনে চালের খুদও বার করা হয়। চালের মধ্যে ভাঙা চাল (খুদ) থাকলে ভাত ভাল হয় না।
প্রণালী: খুদ বেছে নিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নাও। ডেকচি বা হাঁড়িতে করে উনুনে জল বসাও। জল গরম হলে খুদ ছাড়ো। খুদ সিদ্ধ হতে জল কম লাগে। বেশ করে নেড়ে দাও। খুদ সিদ্ধ হয়ে জল শুকিয়ে বেশ পায়েসের মতো হয়ে এলে নামিয়ে সকলকে পরিবেশন করো। এই জাউয়ের সঙ্গে আলু সিদ্ধ, নুন, ঘি, তেল কাঁচালঙ্কা দিয়ে বেশ মুখরোচক করে মেখে খাওয়া চলে। ছোট বাচ্চাদের জন্যে দুধ, চিনি বা পাটালিগুড় দিয়ে মেখে দেওয়া যেতে পারে। জাউয়ের খাদ্যগুণও ভাল, আবার পুষ্টিকরও বটে।
৩। দালিয়ার ফেনাভাত
প্রণালী: এককাপ মাঝারি দানার দালিয়া জল দিয়ে পরিষ্কার করে কয়েকবার ধুয়ে নাও। এবার ডেকচি বা হাঁড়িতে ৫০০ গ্রাম মতো জল চড়াও। জল গরম হলে দালিয়া ছেড়ে সিদ্ধ হতে দাও। যখন গলে যাবে তখন নামাবে। জল কম মনে হলে, আবার গরম জল দিয়ে ভাল করে ঘেঁটে দেবে। জল বেশি হলে একটু জল শুকিয়ে নামিয়ো। ফেনাভাতের চাইতে একটু ঘন হবে। তলায় যাতে লেগে বা ধরে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কারণ দালিয়ার তলায় লেগে ধরার সম্ভাবনা খুব বেশি। দালিয়া গরম গরম সিদ্ধ আলু, ঘি, নুন, কাঁচালঙ্কা দিয়ে খেতে অতি চমৎকার।
৪। নতুন সিদ্ধ চালের ভাত
উপকরণ: খুদ বেছে চাল ঝেড়ে ধুয়ে কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রাখো। উনুনে হাঁড়ি বা ডেকচিতে বেশি করে জল বসাও। জল ফুটলে ভিজানো চাল ছাড়ো। যখন চাল সিদ্ধ হবে কিন্তু গলে যাবে না, সেই সময় বেশ কিছুটা ঠাণ্ডা জল ঢেলে নেড়েচেড়ে ভাতের ফেন ঝরিয়ে নাও, ভাতে একটুও ফেন থাকবে না। মাটিতে একটি বাটি উপুড় করে তার ওপর ঢাকনা সমেত ভাতের হাঁড়ি উপুড় করে দাও। হাঁড়ি একপাশে কাত করে সব ফেন গেলে হাঁড়ি সোজা করে ধরে ঝাঁকিয়ে দাও। ভাত বেশ ঝরঝরে হবে।
নতুন চালের ভাত রান্নায় অভিজ্ঞতার দরকার। একটু এদিক-ওদিক হলেই ভাত খারাপ হয়ে যায়। চাল যদি পরিমাণে বেশি থাকে, তবে ভাত সামান্য সিদ্ধ করে নামিয়ে জল ঝরিয়ে হাঁড়ি ঝাঁকিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখলেই পুরো সিদ্ধ হয়ে যাবে। নতুন আতপ চালের ভাতও এই নিয়মেই খুব সাবধানে করতে হয়।
৫। কাপড়ের পুঁটুলিতে ভাত
এই ভাত শিশু ও গুরুতর পেটের রোগীকে দেওয়া যায়। চাই বেশ পুরনো চাল শিশু বা বড়দের প্রয়োজন মতো, পরিষ্কার কাপড়ের টুকরো বড় একখণ্ড।
প্রণালী: পুরনো চাল ঝেড়ে বেছে জলে কয়েকবার পরিষ্কার করে রাখো। কাপড়টি ধুয়ে কাপড়ের টুকরোর ভেতরে চাল রেখে, খুব ঢিলে করে কাপড়ের পুঁটুলি বাঁধো। এত ঢিলে রাখবে যাতে ভাত হয়ে গেলেও পুঁটুলিটি ঢিলেই থাকে। বেশি ভাতের ভেতরে এই পুঁটুলি ফেলে সিদ্ধ করো, বা আলাদা হাঁড়িতে জল দিয়ে সিদ্ধ করে নাও। কাপড়ের পুঁটুলির ওপর দিয়ে ভাত টিপে দেখো। সুসিদ্ধ হলে নামিয়ে নিয়ে একটা থালায় রেখে থালাটি কাত করে রাখো, সব যেন ঝরে যাবে।
আবার জল ঝরা পুঁটুলিটি ফেন-খালা ভাতের মধ্যে রেখে দাও। এতে পুঁটুলির ভাত গরম থাকবে। খেতে দেওয়ার আগে ভাতের হাঁড়ি থেকে ভাতের পুঁটুলিটি বার করে নিয়েই সাবধানে কাপড় খুলে ভাত বার করে গরম গরম খেতে দেবে। সিঙ্গি, মাগুর মাছের সঙ্গে কাঁচকলা দিয়ে আদা ঝোল, বা গাঁদালের ঝোল দিয়ে খেতে দাও।
৬। পিসপাস
উপকরণ: সুগন্ধি মিহি পুরনো চাল ১০০ গ্রাম, আলু মাঝারি ১টি, কচি কড়াইশুঁটির দানা বড় ১ চামচ, পরিমাণ মতো নুন, আধ চামচ চিনি, তেজপাতা ২টি, দারুচিনি ১ ইঞ্চি টুকরো, আদা চাকা ৫-৬টি, পেঁয়াজ আধখানা কুচি, মাঝারি ১ চামচ মাখন।
প্রণালী: চাল বেছে পরিষ্কার করে ধুয়ে নাও। আলু ছাড়িয়ে ২ বা ৩ টুকরো করো। ডেকচি বা হাঁড়িতে করে উনুনে জল চড়াও। জল গরম হলে চাল ছাড়ো। আলু দাও। কিছুটা সিদ্ধ হয়ে এলেই পেঁয়াজকুচি, কড়াইশুঁটি ও পরিমাণ মতো নুন ও চিনি দাও। আলু ও চাল সিদ্ধ হয়ে গলে এলে তেজপাতা, আদা চাকা, দারুচিনির টুকরো দাও। আলু, চাল ইত্যাদি গলে পায়েসের মতো হয়ে এলে, মাখন দিয়ে বেশ ঘেঁটে গরম গরম খেতে দাও। এই ভাত দুর্বল রোগীর পক্ষে বিশেষ উপকারী।
৭। পোড়ের ভাত
উপকরণ: শিশু বা বয়স্ক লোক বুঝে চালের মাপ ঠিক করবে। পুরনো মিহি চাল। একটি মাটির হাঁড়ি (যে হাঁড়ি আগুনে ফাটে না, সেই রকম মজবুত দেখে ও চালের মাপ বুঝে)। হাঁড়ির ঢাকনি ১টি। বেশ কিছু ঘুঁটে।
প্রণালী: চাল বেছে নিয়ে অনেকবার জল ফেলে ফেলে পরিষ্কার করে ধুয়ে রাখো। হাঁড়ির তর দিকটা খুব পরিষ্কার করে ধোও। বাইরের দিকে কিন্তু একদম জল লাগাবে না। বাইরের দিকে জল লাগলে মাটির হাঁড়ি ফেটে যাবার সম্ভাবনা থাকে। একটি উনুনে বা মাটিতে ইঁট পেতে একটি বড় উনুনের মতো করো। নীচে কিছু মাটি দাও বা ইট পেতে দাও। না হলে আগুনে মেঝে খারাপ হয়ে যেতে পারে। উনুন বা ইটের উনুনের ভেতর দিকে আলগা ভাবে বেশ করে চারদিকে ঘুঁটে সাজিয়ে রাখো। তারপর ঘুঁটেতে আগুন দাও। হাঁড়িতে চাল দিয়ে যতটা চাল তার দ্বিগুণের একটু বেশি জল দিয়ে ঘুঁটের আগুনের
মাঝখানে বসিয়ে দাও। ঘুঁটের খুব ধোঁয়া হবে। বেশি ধোঁয়ার সময় হাঁড়ি ঢাকা দেবে না, তা হলে ভাতে ঘুঁটের গন্ধ হবে। ধোঁয়া কমে গেলে ঢাকা দিয়ো। এই ঘুঁটের আগুনের ওপরেই মাটির হাঁড়ি বসানো থাকবে। ঘুঁটে পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও ওই গরমে হাঁড়ি বসানো থাকবে, তা হলে ফেনও শুকিয়ে যাবে। খাওয়ার সময় হাঁড়ি থেকে ভাত বেড়ে নিয়ে হাঁড়ি ধুয়ে পরিষ্কার করে পরের দিনের জন্য হাঁড়ি তুলে রেখে দিয়ো। পোড়া হাঁড়িতে ভাত ভাল হয়। ভেতরটা তেলা-তেলা হওয়ার জন্য ভাত হাঁড়িতে লেগে ধরে যায় না। ভাত খুবই নরম হয় এবং ভাত আস্তই থাকে। এই ভাতের ফেন গালতে হয় না।
৮। ফেনাভাত
শীতকালে নতুন সুগন্ধি আতপ চালের ফেনাভাত অতি উপাদেয়। এই ভাতের সঙ্গে নতুন আলু সিদ্ধ, নতুন শিম সিদ্ধ, নতুন মুলো সিদ্ধ, ভাজামুগ ডাল বা মুসুর ডাল কাপড়ে বেঁধে দাও। ফুলকপি সিদ্ধ, বেগুন পোড়া, ডিম সিদ্ধ ইত্যাদি নানারকম সিদ্ধ, কাঁচালঙ্কা, পেঁয়াজকুচি, মাখন বা তেল দিয়ে গরম ফেনাভাত মেখে খেতে খুবই মুখরোচক।
প্রণালী: লোকের সংখ্যা বুঝে কামিনী আতপ বা ওই জাতীয় সুগন্ধি আতপ চাল ঝেড়ে বেছে ধুয়ে নাও। হাঁড়ি বা ডেকচিতে উনুনে বসাও। চাল ২৫০ গ্রাম নিলে ৭০০-৭৫০ গ্রাম জল লাগবে। জল ফুটলে চাল ছেড়ে, তাড়াতাড়ি হাতা দিয়ে নেড়ে দাও, না হলে নতুন চাল ডেলা বেঁধে যায়। এই ভাতের চাল, সিদ্ধ হয়ে জল কমে এলে বারবার তলা দেখতে হবে না হলে লেগে যেতে পারে। ফেন ভাতেই থাকবে, তাই নাম ফেনাভাত। চাল সিদ্ধ হয়ে ফেনে ভাতে মিশে গিয়ে ঘন বেশ পায়েস পায়েস মতো হয়ে যায়। গরম গরম নানারকম সিদ্ধ, নুন, ঘি, মাখন, তেল ইত্যাদি দিয়ে খেতে খুব ভাল।
৯। ফেন-না-গেলে ভাত
চাল ঝেড়ে, বেছে ধুয়ে ঘণ্টা খানেক ভিজিয়ে রাখো। যতটা চাল তার দ্বিগুণ মাপের জল ডেকচি করে উনুনে বসাও। জল ফুটলে চাল ছাড়ো, বেশ করে নেড়ে দাও। টগবগ করে ফুটে উঠলে আঁচ কমিয়ে বসিয়ে দাও। আধ সিদ্ধ হলে একদম আঁচ কমিয়ে বসিয়ে রাখো, ঠিক সিদ্ধ হয়ে যাবে। ফেন ঝরাতে হবে না।
১০। ভাতের মণ্ড
এই ভাত গুরুতর অসুস্থ রোগীর জন্যে সময় সময় দরকার হয়। প্রণালী: খুব পুরনো চাল ঝেড়ে, বেছে, পরিষ্কার করে বার কয়েক ধুয়ে নাও। ডেকচি বা পুঁটুলিতে ঢিলে করে বেঁধে অনেকক্ষণ সিদ্ধ করো। ভাত একদম গলে যাবে। উনুন থেকে নামিয়ে রাখো। হাতসহা ঠাণ্ডা হলে, আর একটি ধোয়া পরিষ্কার কাপড়ের টুকরোয় অল্প অল্প করে ভাত নিয়ে পরিষ্কার হাতে বেলের পানার মতো হাত দিয়ে ঘষে ঘষে ভাতের মণ্ড একটি পরিষ্কার প্লেটে রাখো। বেশ ঘন থকথকে হয়ে যাবে। কোনও বিচ থাকবে না। খুব মোলায়েম হবে। এই মণ্ড মাছের সুপ, তরকারির সুপ, চিকেন সুপ ও ঘোল ইত্যাদির সঙ্গে গুলে চামচ দিয়ে খেতে বেশ ভালই লাগবে।
ভাতের ছিবড়েটি দিয়ে অন্য কোনও কিছু করতে পারো। চিনি দিয়ে জ্বাল দিয়ে পায়েসের মতো করে নাও। পায়েসের মতো খেতে ভাল লাগবে। জ্বালের সময় ২-১টা তেজপাতা ও এলাচগুঁড়ো দিলে সুঘ্রাণ বেরোবে। পায়েসটি অবশ্য রোগীর জন্য নয়।
১১। ভিজে ভাত (টাটকা পান্তা ভাত)
উপকরণ: ২৫০ গ্রাম চালের ভাত, টক দই ৫০ গ্রাম, কাঁচা আম একটা, ১-১%, চামচ পরিমাণ মতো নুন, সামান্য চিনি, গন্ধরাজ লেবুর পাতা ৮-১০টি, গন্ধরাজ লেবুর টুকরো ২-৩টি, কয়েকটি কাঁচালঙ্কা, জিরাভাজার গুঁড়ো মাঝারি ১ চামচ, আদাবাটা মাঝারি ১ চামচ।
প্রণালী: রান্নার প্রথমেই সরু চালের ভাত রান্না করো। ফেনটা ভাল করে ঝরিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা জল ঢেলে ভিজিয়ে দাও। ভাত একদম ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আমবাটা, আদাবাটা, দই ফেটিয়ে, নুন ও সামান্য চিনি দিয়ে আলগাভাবে ভাতে মিলিয়ে নাও। ভাতে খুব বেশি জল থাকবে না, মাখামাখা মতো হবে। জল বেশি থাকলে ভাত থেকে কিছু জল ফেলে দিয়ে, তারপর মশলা ও দই ইত্যাদি মাখতে হবে। লেবুর পাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে ভাতে কচলে দাও। বেশ সুগন্ধ হবে।
লেবুর টুকরো আর কয়েকটি কাঁচালঙ্কা ভাতে দাও। সকলের শেষে জিরাভাজার গুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়ে একবার চামচ দিয়ে নেড়ে দাও। কড়া গরমের সময় ডালের বড়া ও আম ডাল দিয়ে খেতে খুবই মুখরোচক। এই ভাতের সঙ্গে কাসুন্দিও খুব ভাল লাগে। লেবু ও কাঁচালঙ্কা দেওয়া যায় ইচ্ছামতো মেখে খাওয়ার জন্যে।
১২। ভুট্টার দালিয়ার ফেনাভাত
উপকরণ: ভুট্টার দালিয়া, জল।
প্রণালী: বাজার থেকে নতুন ভুট্টার দালিয়া প্রয়োজন মতো কিনে এনে ঝেড়ে, বেছে, বড় দানাগুলি আলাদা করে রেখে জল দিয়ে ভাল করে ৪-৫ বার ধুয়ে নাও। বড় দানাগুলো আলাদা করার কারণ, এগুলো সিদ্ধ হতে দেরি হবে, আর ছোট দানাগুলো গলে যাবে।
একটি ডেকচিতে করে উনুনে জল চড়াও। জল গরম হলে ধোয়া দালিয়া ছেড়ে সিদ্ধ হতে দাও। খানিক সিদ্ধ হবার পর আঁচ কমিয়ে দাও, ধীরে ধীরে সিদ্ধ হতে দাও। ভুট্টার দানা সিদ্ধ হতে একটু বেশি সময় লাগে। জলও একটু বেশি লাগবে। ভাল সিদ্ধ হয়ে গেলে অল্প জল থাকতে ঢেকে নামিয়ে রাখো। জল টেনে গেলে ফেনাভাতের মতো হবে। গরম গরম আলু সিদ্ধ, তেল বা ঘি, নুন, কাঁচালঙ্কা দিয়ে খেতে ভাল লাগে। যে সব ব্রত-নিয়মে ভাত খাওয়া নিষিদ্ধ, সেই সব ব্রতে ব্রতীরা এই ভাত খেতে পারেন।
১৩। মালাই ফেনাভাত
উপকরণ: ভাল সরু আতপ চাল ২৫০ গ্রাম, নারকেল ১টি, পেঁয়াজ ২-৩টি, কাঁচালঙ্কা ৫-৬টি, আদা ১ গিঁট, পরিমাণ মতো নুন, পছন্দ মতো চিনি, জল প্রায় ১ লিটার।
প্রণালী: নারকেল কুরে নিয়ে অল্প গরম জলে ফেলে, তারপর চটকে কাপড়ের টুকরোয় চিপে নারকেলের দুধ বার করে নাও। আদা ও পেঁয়াজ কুচি করো, কাঁচালঙ্কা চিরে রাখো।
উনুনে হাঁড়িতে করে ফুটন্ত জলে ধোয়া চাল, নুন, মিষ্টি, আদা ও পেঁয়াজকুচি দাও। চাল সিদ্ধ হলে হাতা দিয়ে বেশ করে ঘেঁটে জলের সঙ্গে মিশিয়ে দাও (ডাল ঘোঁটার মতো)। নারকেলের দুধ ভাতে ঢেলে দিয়ে কাঁচালঙ্কা দাও। কিছুক্ষণ ফুটবার পর নামাও। নামানোর আগে নারকেলকোরা দিলে স্বাদ আরও সুন্দর হয়। গরম গরম খেতে দিয়ো।
১৪। মিহি আতপ চালের ভাত
প্রণালী: গোলাপ সরু, গোবিন্দভোগ ইত্যাদি যে কোনও মিহি চাল ঝেড়ে বেছে ৪-৫ বার পরিষ্কার করে ধুয়ে জলে অন্তত একঘণ্টা রাখো। চাল ভিজিয়ে রাখলে ভাত সুন্দর হয়। চালের থেকে ৪-৫ গুণ বেশি জল ডেকচি করে উনুনে বসাও। জল ফুটলে চাল ছাড়ো। একবার নেড়ে দাও। কিছুক্ষণ পর চামচ দিয়ে তুলে দেখো চাল সিদ্ধ হয়েছে কিনা; আঙুল দিয়ে টিপে নরম লাগলে নামিয়ে ফেন ঝরাও। বেশি ভাত হলে ভাত একটু শক্তই লাগবে। গরমে ঠিক হয়ে যাবে। ফেন ঝরিয়ে ভাত ঝাঁকিয়ে ঢেলে রাখো। বেশ ঝরঝরে ও সুসিদ্ধ ভাত হবে।
মনে রাখা দরকার, নতুন চাল হলে ফেন ঝরাবার আগে উনুনে থাকতেই কিছু কাঁচাজল ঢেলে একবার নেড়ে নামিয়ে ফেন ঝরিয়ে একটি বাটি উপুড় করে তার ওপরে ভাতের ডেকচি কাত করে উপুড় করে দাও। সব ফেন ঝরে যাবে। ডেকচি একবার ঝাঁকিয়ে ঢেকে রাখো।
১৫। সিদ্ধ চালের দমে ভাত
উপকরণ: অনেক সময় রেশনের সিদ্ধ চালের ভাত রাঁধতে হিমসিম খেতে হয়। জ্বালানি ও সময় নষ্ট করলেও ইস্কুল, কলেজ ও অফিসের ভাত দিতে গৃহিণীরা সামলে উঠতে পারেন না। এইভাবে ভাত রান্না করলে সময় ও জ্বালানির কিছু সুবিধা হয় মনে করে সেভাবে ভাত রাঁধার কথা বলছি।
চাল ধুয়ে বেছে যতটা চাল তার তিনগুণ জল দিয়ে হাঁড়ি করে বসিয়ে ঢাকা দাও। কিছুক্ষণ ফুটবার পর কিছু নুন দাও। (ফেনের সঙ্গে নুন বেরিয়ে যাবে, ভাত নোনতা লাগবে না)। আরও ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে ঢাকনা সহ ভাত উনুন থেকে নামিয়ে রেখে, উনুনে অন্য রান্না করতে থাকো। কিছুক্ষণ পরে ভাতের ঢাকনা খুলে দেখো। ভাতের ধোঁয়া কমে গেলে আবার হাঁড়ি উনুনে বসাও। আবার কিছুক্ষণ ভাত ফুটিয়ে ঢাকাসহ নামিয়ে রাখো। অন্য রান্না চড়াও। এইভাবে ৩-৪ বার ভাত উনুনে বসাও। ফাঁকে ফাঁকে উনুনে অন্য রান্না করো। মাঝে মাঝে ভাত টিপে দেখো সিদ্ধ হল কিনা। উপযুক্ত সিদ্ধ হলে আবার উনুনে একবার বসাও।
ফুটে উঠলে নামিয়ে ভাতের ফেন গালো। ভাতে একদম ফেন থাকবে না এবং সুসিদ্ধ ঝরঝরে হবে। এইভাবে সময় আর জ্বালানি দুইই বাঁচবে। দেরিতে যারা এই ভাত খাবে, উনুনের আগুন ফেলে হাঁড়ি উনুনে বসিয়ে রাখলে নীচের ভাত প্যাচপ্যাচে হবে না।
১৬। সুজির ভাত
অমাবস্যা, পূর্ণিমা, একাদশী, নানা ব্রত-নিয়মে যখন ভাত খাওয়ার বিধিনিষেধ থাকে তখন সহজে, কম খরচে, আর কম সময়ে সুজির ভাত করে নিলে সুবিধে হয়। সুজির ভাত, ডাল তরকারি, দুধ, দই ইত্যাদি দিয়ে মেখে খেতে ভাল লাগে। ঘি বা তেলসহ নুন, লঙ্কা, আলু সিদ্ধ দিয়ে মেখে বেশ খাওয়া চলে।
প্রণালী: সুজি বেছে চেলে নিয়ে, গুঁড়ো ঝেড়ে ফেলে শুকনো কড়াতে অল্প আঁচে খুক্তি দিয়ে নেড়েচেড়ে ভাজতে থাকো। সুন্দর একটা গন্ধ বেরোবে, কিন্তু সুজি একদম লাল হবে না, রং সাদাই থাকবে। ডেকচি বা কোনও বাসনে করে উনুনে জল বসাও। জল গরম হলে নামিয়ে রাখো। সুজির কড়াই উনুনে বসাও। বাঁ হাতে অল্প অল্প গরম জল ঢালো।
ডান হাতে খুন্তি দিয়ে অনবরত নাড়তে থাকো। সুজি সামান্য শক্ত থাকতেই আর জল দিয়ো না। ভাল করে নেড়েচেড়ে নাও। সুজি সিদ্ধ হয়ে যায় তো নামিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে, আবার খুন্তি দিয়ে নেড়েচেড়ে নাও। একটু ঠাণ্ডা হলেই বেশ ঝরঝরে হয়ে যাবে। জল ঢালার পরে সাবধানে নাড়াচাড়া করতে হবে। তা না হলে তলায় লেগে ধরার ও ডেলা হওয়ার ভয় থাকে।
আরও পড়ুন:
7 thoughts on “ভাত এর যত পদ”