সিদ্ধ খাবারের এর যত পদ

সিদ্ধ খাবারের এর যত পদ নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে রেনুক দেবী চৌধুরীর নাম। তিনি তার বই “রকমারি নিরামিষ রান্না” নামক বইতে খুবই চমৎকার করে লিখেছে – কয়েকটি সিদ্ধর কথা লিখছি। এ ছাড়াও অনেক তরকারি পছন্দ মতো সিদ্ধ করে নানারকম ভাবে মেখে মুখরোচক করে খাওয়া যায়।

সিদ্ধ খাবারের এর যত পদ - কলমি শাক [ Ipomoea Aquatica ]
কলমি শাক [ Ipomoea Aquatica ]

সিদ্ধ খাবারের এর যত পদ

মুলো, আলু, ঝিঙে, বেগুন, শিম, কাঁচকলা, বিন, কাঁকরোল, মিষ্টি কুমড়ো, উচ্ছে, করলা, স্কোয়াস, ওলকপি, ফুলকপি, বাঁধাকপির সাদা নরম অংশ, শালগম, ডুমুর, রাঙাআলু, মুখিকচু, জলকচুর মুখের দিক, বিলাতি আমড়া, জলপাই, কাঁচা আম ইত্যাদি নানা রকম সবজি সিদ্ধ করে এবং রুচি মতো মেখে খাওয়া যায়। জলে সিদ্ধ করলে স্বাদ একটু পানসে হয়, ভাতে বা ভাতের ফেনে সিদ্ধ করলে স্বাদ বেশি হয়। প্রেশার কুকারে জল ছাড়া সিদ্ধ ভাল লাগে। সিদ্ধ করে তরকারি নানাভাবে মেখে খাওয়া চলে। কোনও কোনও সবজি চটকে মাখতে হয়, কোনও কোনও সবজি নুন, তেলে মেখে অমনিতেই খেতে ভাল লাগে। পেঁয়াজ, গোলমরিচ, কাঁচালঙ্কা, লেবু, পোড়ালঙ্কা, নুন, তেল, ঘি, মাখন ইত্যাদি অনেক কিছু দিয়ে মেখে নিয়ে মুখরোচক করা যায়। টক ও একটু মিষ্টি মাখলে সিদ্ধ উপাদেয় লাগে।

আলু সিদ্ধ:

আলু সিদ্ধ আমাদের সকলেরই একটি প্রিয় খাদ্য। আলু সিদ্ধ পছন্দ করেন না এমন লোক কমই দেখা যায়।

আলু সিদ্ধ [ Boiled potatoes ]
আলু সিদ্ধ [ Boiled potatoes ]

প্রণালী: আলু পরিষ্কার করে ধুয়ে ভাতে, ডালে বা কেবল জলেই সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে, সিদ্ধ মাখার উপযোগী করে চটকে নাও। আলু খোসাসুদ্ধ সিদ্ধ করলে খাদ্যগুণ নষ্ট কম হয়। সেজন্যে সিদ্ধ খাওয়ার আলু খোসাসহ সিদ্ধ করাই উচিত। চটকানো আলু নানারকম উপকরণ দিয়ে মেখে মুখরোচক করা হয়। তেল, ঘি, মাখন এ সব তো আছেই, তা ছাড়া পেঁয়াজকুচি, লঙ্কাকুচি, আদাকুচি, ধনেপাতা কুচি। শুকনোলঙ্কা ভেজে বা পুড়িয়ে গুঁড়ো করে, গোলমরিচ গুঁড়ো, লেবুর রস, নুন ইত্যাদি দিয়ে নানাভাবে মেখে খেতে ভাল। আর যে কোনও জিনিস দিয়েই মাখা হোক না কেন, তেল বা ঘি দিতেই হয়। তেল, কাঁচালঙ্কা, নুন দিয়ে নতুন আলুসিদ্ধ খেতে বেশ ভাল। ফেনা ভাতে আলুসিদ্ধ, ঘি, কাঁচালঙ্কা দিয়ে খুবই মুখরোচক হয়।

ওল সিদ্ধ

ওল কচু
ওল কচু

উপকরণ: যে ওলে গলা ধরে না, যেমন সাঁতরাগাছি বা মাদ্রাজি ওল, প্রয়োজন মতো একখণ্ড। ভাল। লঙ্কা, সরষেবাটা, সামান্য তেল, কাঁচালঙ্কা, পছন্দ করলে একটু নারকেলবাটা (না দিলেও ক্ষতি “প্রণালী: করে খোসা ফেলে, একদিক

একদিক দু-তিন ফালা করে কেটে ধুয়ে রাখো। ভাতের ফুটলে ২-৪ মিনিট ফোটার পর ছাড়ো। ভাত সিদ্ধ হলে, ফেন ঝরিয়ে কিছুক্ষণ ঢাকা দিয়ে রাখার পর, সিদ্ধ ওলের খণ্ড তোলো। বেশ করে চটকে চটকে নুন, তেল, কাঁচালঙ্কা ও দিয়ে মাখো। পছন্দ করলে নারকেলবাটাও দেওয়া মুখরোচক হয়। সরষেবাটা হলে মাখবে। ওল শরীরের পক্ষেও উপকারী।

কলমি ডগা

কলমি শাক [ Ipomoea aquatica]
কলমি শাক [ Ipomoea aquatica]

উপকরণ: টাটকা কচি ডগা মোটা টাটকা কচি কলমি ডগার যতটা নরম অংশ নীচের শক্ত অংশটুকু বাদ দাও। পরিষ্কার করে ধুয়ে ভাতের দিকে ডাঁটা টিপে দেখো, সিদ্ধ হলে নামাও। ফেন ঝরিয়ে নুন, তেল মেখে দাও। ডগাগুলো চটকাবে না। আলগা আলগাই থাকবে। ভাতে মেখে খেতে ভালই লাগে।

কড়াইশুঁটি সিদ্ধ

উপকরণ: কড়াইশুঁটি গ্রাম, ২-৩টি কাঁচালঙ্কা, নারকেলকোরা বড় ২-৩ চামচ, আন্দাজ মতো নুন। ভাল ঘি বা ভাল সরষের তেল।

কড়াইশুঁটি [ Green Peas ]
কড়াইশুঁটি [ Green Peas ]

প্রণালী: কড়াইশুঁটি দানা ছাড়িয়ে ধুয়ে মিহি করে বাটো। কাঁচালঙ্কা আর নারকেলকোরা একত্রে মিহি করে বাটো। এখন বাটা নারকেল, কাঁচালঙ্কাবাটা, কড়াইশুঁটিবাটা এবং পরিমাণ মতো নুন দিয়ে মেখে নাও।

এখন এই মশলামাখা বাটা কড়াইশুঁটি একটা পরিষ্কার কাপড়ের টুকরোয় আলগাভাবে বেঁধে, ফুটন্ত ভাতের মধ্যে ছেড়ে দাও। ভাত হয়ে গেলে, ফেন ঝরাবার আগে এই পুঁটুলিটা করে রাখো। খাবার সময় ভাল সরষের তেল বা ভাল ঘি দিয়ে মেখে খেতে দাও। সুস্বাদু হয়।

কড়াইশুঁটির ঝুরো

উপকরণ: কড়াইশুঁটি বাটা ২৫০ গ্রাম, আদাবাটা বড় চামচ, কাঁচালঙ্কাবাটা চামচ, পেঁয়াজবাটা ১ চামচ, চিনি চা-চামচ, পরিমাণ মতো নুন, ২টি, জিরেভাজার গুঁড়ো চামচ, বড় আধ চামচ। প্রণালী: বাটা কড়াইশুঁটিতে আদাবাটা, পেঁয়াজবাটা, কাঁচালঙ্কাবাটা, পরিমাণ মতো

কড়াইশুঁটি [ Green Peas ]
কড়াইশুঁটি [ Green Peas ]

নুন, চিনি সব দিয়ে বেশ করে রাখো। উনুনে কড়াতে ঘি চড়াও। তেজপাতা ফোড়ন দাও। ঘি বেশ গরম হলে মশলামাখা কড়াইশুঁটিবাটা দিয়ে, ভাল করে নাড়াচাড়া করো। উনুন থেকে নামিয়ে আবার উনুনে চড়িয়ে, আবার নামিয়ে নাড়তে নাড়তে যখন বেশ ঝুরঝুরো হয়ে যাবে, তখন জিরেভাজার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে নামিয়ে ঢেকে রাখো। রাঁধার সময় কড়াইশুঁটিবাটা যেন পুড়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বেশ মুখরোচক।

কাঁচা পোস্তবাটা

উপকরণ: পোস্তদানা প্রয়োজন মতো বড় ২-৩ চামচ, নুন, কাঁচালঙ্কা, তেল, ঘি বা মাখন, পছন্দ মতো মিহি পেঁয়াজকুচি।

কাঁচা পোস্ত বাঁটা [ Kancha Posto Bata ]
কাঁচা পোস্ত বাঁটা [ Kancha Posto Bata ]

প্রণালী: পোস্ত কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে মিহি করে বেটে নাও। বেশ শুকনো বাটা হবে। পোস্তবাটাতে নুন, তেল, ঘি বা মাখন, কাঁচালঙ্কা কুচি, পেঁয়াজকুচি দিয়ে মাখো। ভাত দিয়ে মেখে খেতে বেশ লাগবে। পেঁয়াজ নিজের রুচি মতো দেবে, কারণ পেঁয়াজ না দিলেও চলে।

কাঁচা মানকচুবাটা (১):

এই মানকচুবাটাতে কখনওই গলা ধরবে না এবং খেতেও মুখরোচক। উপকরণ: মানকচু এক টুকরো, ৫০০ গ্রাম মতো (নীচের শিকড়ের দিকের হলেও ক্ষতি নেই)। ছোট নারকেল ১টি, বড় ২ চামচ রাই সরষে, কাঁচালঙ্কা ৫-৬টি, পরিমাণ মতো নুন, অল্প চিনি।

মানকচু বাঁটা [ Mankachu and coconut kernel paste with ground mustard ]
মানকচু বাঁটা

প্রণালী: মানের খোসা মোটা করে ছাড়িয়ে, ছোট ছোট চাকা চাকা করে কেটে শিলে ভাল করে ছেঁচে, একটি কাপড়ের টুকরোয় ভরে জলে ভাল করে ধুয়ে বেশ করে চিপে নাও। এখন এই ছেঁচা মানকচু শিলে ভাল করে বাটো। বাটা হলে আবার কাপড়ে বেঁধে চিপে দুধের মতো সাদা রস বার করে ফেলে দাও। নারকেল কোরাও। সরষেবাটা একত্রে আবার শিলে বাটো, এবং সব ভাল করে মাখো। ভাতে মেখে খেতে বেশ লাগে। মানবাটা সরষের সঙ্গে মিশে সামান্য ঝাল ও অল্প মিষ্টি স্বাদের হয়। গলা ধরে না। অনেকে ভাল সরষের তেলও মানবাটায় মেখে খায়।

৮। কাঁচা মানকচুবাটা (২):

মানকচু [ Alocasia macrorrhizos ]
মানকচু [ Alocasia macrorrhizos ]

উপকরণ: গলা না-ধরা মানকচু মুখের দিক থেকে ১ টুকরো আন্দাজ, ওজন ৫০০ গ্রাম মতো, বড় নারকেল ১টি, সরষে বড় ১%, চামচ, কাঁচালঙ্কা ২-৩টি, পরিমাণ মতো নুন, সামান্য চিনি, সরষের তেল বড় ১ বা ১ চামচ। প্রণালী: মানের টুকরোটির খোসা বেশ মোটা করে ছাড়িয়ে পাতলা পাতলা টুকরো করে কেটে জল দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখো। এই কাটা মান বেশ করে।

ছেঁচে নাও। নারকেল কোরাও। মানকচুর সম পরিমাণে নারকেলকোরা নাও, ছেঁচা কচু ও নারকেলকোরা একসঙ্গে খুব মিহি করে বেটে রাখো। কাঁচালঙ্কা ও সামান্য নুন দিয়ে মিহি করে সরষে বাটো। সরষেবাটা, নারকেল, কচুবাটা সব একসঙ্গে মিশিয়ে পরিমাণ মতো নুন ও সামান্য চিনি দাও। আবার সমস্ত বাটা জিনিসগুলি একসঙ্গে বেটে নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে একটি কাচ বা স্টিলের বাসনে, তুলে রাখো। সরষের তেল দিয়ে একটু মেখে কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে গরম ভাতের সঙ্গে প্রথম পাতে পরিবেশন করবে। কাঁচা মান হলেও গলা ধরবে না। বেশ রসা রসা হবে। এইরকম করে বাটা জলকচুও ভাল লাগবে এবং ভাতের সঙ্গে খাওয়া চলে।

কাঁঠালবিচি সিদ্ধ

কাঁঠাল বিচি
কাঁঠাল বিচি

উপকরণ: পুষ্টদানা ও একটু খোসা শুকিয়েছে এমন কাঁঠালবিচি, নুন, তেল, কাঁচালঙ্কা। প্রণালী: কাঁঠালবিচির ওপরের শক্ত খোসা ফেলে, ভেতরের লাল খোসা বঁটি দিয়ে যতদূর সম্ভব চেঁছে ফেলে দাও। ভাতের ফেনে বিচিগুলো ভাল করে সিদ্ধ করে নামাও। ভাতে সিদ্ধ দিলে ভাতের রং লাল হয়ে যায়। ফেন ঝরিয়ে বিচিগুলো একটি পাত্রে রেখে, নুন তেল কাঁচালঙ্কা মেখে পাতে দাও। ইচ্ছে হলে সামান্য চটকে ও মেখে দিতে পারো। আস্ত বিচি সিদ্ধ চিবিয়ে খেতেও বেশ লাগে।

ছোলার ডালের ঝুরো

উপকরণ: ছোলার ডাল ৫০০ গ্রাম, নারকেল / মালা, ফোড়নের শুকনোলঙ্কা ২টি, আদাবাটা বড় ১ চামচ, লঙ্কাবাটা ১ চা-চামচ, জিরেবাটা মাঝারি ১ চামচ, তেজপাতা ২-৩টি। পরিমাণ মতো নুন। গরম মশলা বাটা (৩-৪টি ছোট এলাচ, ছোট ৫-৬টি টুকরো দারচিনি)। মিষ্টি ২ চা-চামচ, তেল, ২-৩টি কাঁচালঙ্কা, ঘি বড় ১ চামচ।

ছোলার ডাল
ছোলার ডাল

প্রণালী: ডাল পরিষ্কার করে ধুয়ে, অল্প জলে সিদ্ধ করতে বসাও। এমন জল দিতে হবে যাতে ডাল মোটামুটি সিদ্ধ হয়, অথচ জল না থাকে। খানিকটা নারকেলকোরা, লঙ্কাবাটা, জিরেবাটা, নুন, মিষ্টি, আদাবাটা ডালে দিয়ে নাড়তে থাকো। বেশ থকথকে হয়ে এলে ডাল নামিয়ে রাখো। বাকি নারকেলটির লাল খোসা ছাড়িয়ে কুচিকুচি করে কাটো। আবার উনুনে কড়া বসাও। তেল দাও। তেল তাতলে, নারকেল কুচিগুলি অল্প লাল করে ভেজে তোলো। কড়ায় আরও খানিকটা তেল তাতলে তেজপাতা, জিরে, শুকনোলঙ্কা ফোড়ন দিয়ে ডালটা ঢেলে দিয়ে নাড়তে থাকো। বেশ ঝুরঝুরে হয়ে এলে, নারকেলকুচি ভাজা আর কাঁচালঙ্কা, ঘি, গরম মশলা দিয়ে দাও। নেড়েচেড়ে ঢেকে রাখো। গরম গরমই খেতে ভাল।

ঢ্যাঁড়শ সিদ্ধ

ঢ্যাঁড়শ [ Ladies Finger ]
ঢ্যাঁড়শ [ Ladies Finger ]

উপকরণ: কচি ঢ্যাঁড়শ কয়েকটি, নুন, সরষের তেল। প্রণালী: ঢ্যাঁড়শের বোঁটা ফেলে পরিষ্কার করে ধুয়ে, একটি মোটা সুতোয় বেঁধে রাখো। ভাত ফুটে উঠলে, বাঁধা ঢ্যাঁড়শগুলি ভাতে ছেড়ে দাও। কয়েক মিনিট পরে টিপে দেখো ঢ্যাঁড়শ সিদ্ধ হয়েছে কিনা। সিদ্ধ হলেই সুতো ধরে ভাত থেকে উঠিয়ে নাও। বেশি সিদ্ধ হলে গলে যাবে, আর ভাত থেকে তোলার অসুবিধা হবে। এখন সুতো খুলে আস্ত আস্ত ঢ্যাঁড়শ সিদ্ধ নুন, তেল মেখে ভাতের পাতে পরিবেশন করো।

পটল সিদ্ধ

গাছে পটল [ Trichosanthes dioica ]
গাছে পটল [ Trichosanthes dioica ]

উপকরণ: বেশ টাটকা দেখে বড় পটল, তেল, নুন, কাঁচালঙ্কা। প্রণালী: প্রয়োজন মতো পটল নাও। পটলগুলির ওপরের ছিলকা বঁটি দিয়ে চেঁছে নাও। পটল আস্ত রেখে একটু চিরে ধুয়ে রাখো। উল্টেপাল্টে আগুনে একটু সেঁকে গা পরিষ্কার করে রাখো, অথবা উনুনে কড়ায় তেল দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ করে সামান্য ভেজে তুলে তেল ঝরিয়ে নাও। ভাত ফুটলে পটল ছাড়ো, ফেন গালবার আগে পটল উঠিয়ে দেখো, সিদ্ধ হয়ে থাকলে সব পটল উঠিয়ে ফেলো। যদি ভাল সিদ্ধ না হয় তা হলে ভাতে রেখেই ফেন গেলে নাও। ভাতের ফেন গেলে ঢাকা দিয়ে রাখো, সিদ্ধ হয়ে যাবে। পরে পটলগুলি উঠিয়ে তেল, নুন, সামান্য কাঁচালঙ্কা মেখে পরিবেশন করো। এইভাবে পটল সিদ্ধ করলে পটল খুব তাড়াতাড়ি সুন্দর সিদ্ধ হয়ে যায়, খেতেও স্বাদ ভাল হয়।

পোস্তবাটা সিদ্ধ

পোস্তদানা
পোস্তদানা

উপকরণ: পোস্তদানা ৫০ বা ৭৫ গ্রাম, তেল বা ভাল ঘি, নুন, কাঁচালঙ্কা ২-১টি। ১নং প্ৰণালী: পোস্তদানা কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে জল থেকে ছেঁকে তোলো, কাঁকর যেন না থাকে। শিলে মিহি শুকনো করে বাটো। মুঠো মুঠো করে ডেলা করো। ভাত প্রায় সিদ্ধ হয়ে এলে, ডেলাগুলো একটি একটি করে ভাতে ছাড়ো। ভাত নামাবার আগেই ডেলাগুলো হাতা দিয়ে বার করে একটি পাত্রে রাখো। নুন, কাঁচালঙ্কা, তেল বা ঘি দিয়ে ভাল করে মেখে ভাতের সঙ্গে খেতে দাও।

২নং প্ৰণালী: পোস্তবাটা অন্য প্রণালীতেও সিদ্ধ করা যায়। কচি কলাপাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে একটি থালায় পেতে পোস্তবাটা পাতার ভেতর দিয়ে পাতা ভাঁজ করে চারদিক মুড়ে চারকোনা করে একটি সুতো দিয়ে বেঁধে, ফুটন্ত ভাতের মধ্যে ছেড়ে দাও। ফেন গালবার আগে পোস্ত বাঁধা পাতাটি তুলে রাখো। ঠাণ্ডা হলে পাতা খুলে পোস্ত বার করে একটি বাসনে রেখে নুন, লঙ্কা, তেল, ঘি, মাখন দিয়ে মাখো। পছন্দ হলে পোস্ত সিদ্ধতে মিহি পেঁয়াজকুচিও দেওয়া যায়, খেতে ভালই লাগবে। ১৮

ফুলকপির মোটা ডাঁটা সিদ্ধ

ফুলকপি
ফুলকপি

উপকরণ: টাটকা ফুলকপির মোটা ডাঁটা কয়েকটি, নুন, তেল। প্রণালী: ফুলকপির ডাঁটার মোটা অংশ ৫-৬ আঙুল লম্বা করে ডুমো ডুমো করে কাটো। প্রতিটি টুকরো থেকে বঁটি দিয়ে টেনে পাতলা ছিলকা ফেলে দাও। একসঙ্গে আঁটি বাঁধো। বেশি থাকলে ২-৩টি আঁটিও করতে পারো। ভাতে বা ভাতের ফেনে ভাল করে সিদ্ধ করো। বেশ সিদ্ধ হলে আঁটির বাঁধন ধরে তুলে বাসনে রাখো। নুন, তেল মাখো। আলগা আলগা করে মেখে খেতে দাও। এই ডাঁটা সিদ্ধ চিবিয়ে খেতেও ভাল। পছন্দ করলে নুন, তেল মাখার সঙ্গে নুন দিয়ে মিহি করে বাটা সামান্য সরষেও দিতে পারো। আর একরকম স্বাদ লাগবে।

বাটা কাঁচা মুগ ডাল সিদ্ধ

উপকরণ: টাটকা কাঁচা মুগ ডাল ৫০-৬০ গ্রাম, পরিমাণ মতো নুন, কাঁচালঙ্কা পছন্দ মতো, মাখবার জন্যে ঘি বা ভাল তেল।

কাঁচা মুগ ডাল [ Raw Green Mung Beans ]
কাঁচা মুগ ডাল [ Raw Green Mung Beans ]

প্ৰণালী: কাঁচা মুগ ডাল ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে পরিষ্কার করে ধুয়ে শিলে খুব শুকনো শুকনো করে বেটে, ছোট লম্বা লম্বা করে কয়েকটি ডেলা বানাও। আতপ চালের ভাত চড়াও। আধ সিদ্ধ হয়ে এলে ডালের ডেলাগুলো একটি একটি করে ছেড়ে দাও। ভাত সিদ্ধ হয়ে গেলে ফেন ঝরিয়ে ঢেকে রাখো। কিছুক্ষণ পরে হাঁড়ি ঝাঁকিয়ে একে একে ডালের ডেলাগুলো বার করে গরম গরমই হাত দিয়ে চটকে নাও, ঠাণ্ডা হলে শক্ত হয়ে যাবে। পছন্দ মতো কাঁচালঙ্কা, নুন, ঘি বা তেল দিয়ে মেখে, ছোট ছোট ডেলা করে প্রথম পাতে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করো। তেল বা ঘি নিজের রুচিমতো দিতে পারো, তবে ঘি দিয়ে মাখলেই বেশি ভাল লাগে।

বাটা মটর ডাল সিদ্ধ

মটর ডাল [ Motor Dal, Split Peas ]
মটর ডাল [ Motor Dal, Split Peas ]

উপকরণ: মটর ডাল ৫০ বা ১০০ গ্রাম, পরিমাণ মতো নুন, কাঁচালঙ্কা ২-৩টি, ঘি। প্রণালী: আগের দিন রাতে মটর ডাল ভিজিয়ে রাখো। সকালে ডাল ভাল করে ধুয়ে শিলে বেশ মিহি শুকনো করে বেটে কয়েকটি ডেলা পাকাও। আতপ চালের ভাত চড়াও। ভাত আধসিদ্ধ হয়ে এলে, ফুটন্ত ভাতের মধ্যে একটি একটি করে ডালবাটার ডেলা ছাড়ো। ভাত সিদ্ধ হয়ে গেলে, ফেন গেলে ফেলো। ভাত ঢাকা দিয়ে রাখো। কিছুক্ষণ পরে ভাতের ভেতর থেকে ডালের ডেলাগুলি বার করে একটি থালায় রাখো। গরম গরমই চটকে নিয়ে নুন, পছন্দ মতো কাঁচালঙ্কা এবং ঘি দিয়ে। মেখে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করো।

বেতের ডগা সিদ্ধ

বেতবন [ Batbon ]
বেতবন [ Batbon ]

উপকরণ: বেতের ডগা কয়েকটি, পরিমাণ মতো নুন, তেল। প্রণালী: বেতের ডগার ওপরের শক্ত অংশ ফেলে, ভেতরের সরু নরম অংশ নাও। যতটা নরম পাওয়া যাবে ততটাই নেবে, ভেতরের শক্ত অংশ নিয়ো না। চার আঙুল আন্দাজ লম্বা টুকরো করে, একটি মোটা সুতোয় বাঁধো। ভাতের ফেনে দিয়ে সিদ্ধ করো। ডাল সিদ্ধ হলে নামিয়ে বাঁধন খুলে তেল, নুন মেখে পরিবেশন করো। বেতডগা সিদ্ধর স্বাদ তেতো, কিন্তু খুব উপকারী। এটি শীতকালে ভাল লাগে।

ভাজা মুগ ডাল সিদ্ধ

সোনামুখী মুগ ডাল [ Mug Dal Sonamukhi ]
সোনামুখী মুগ ডাল [ Mug Dal Sonamukhi ]

উপকরণ: যতটা প্রয়োজন সেই মতো ভাজা সোনামুগ ডাল, কাঁচা নুন, ঘি বা তেল। প্রণালী: ডাল একবার ধুয়ে পরিষ্কার কাপড়ে ঢিলে করে বাঁধো। ভাত ফুটলে, পুঁটলি বাঁধা ডাল ভাতে ছাড়ো। হাত দিয়ে ডাল বাঁধো। পুঁটলি তুলে টিপে দেখো, ডাল সিদ্ধ হয়েছে কিনা। ডাল সিদ্ধ হলে পুঁটলি উঠিয়ে থালায় রাখো। থালা কাত করে সব জল বার করে ঝরিয়ে নাও। একটু ঠাণ্ডা হলে পুঁটলি খুলে সিদ্ধ ডাল বার করে তেল বা ঘি, নুন, লঙ্কা দিয়ে মেখে ফেনা ভাতের সঙ্গে খেতে দাও। ভাজা মুগ ডাল সিদ্ধ, ফেনা ভাতের সঙ্গে খুব ভাল লাগে।

মটর ডালের বড়ি পোড়া সিদ্ধ

উপকরণ: মটর ডালের বড়ি কয়েকটি পরিমাণ মতো নুন, কাঁচালঙ্কা ২-১টি, সরষের তেল।

মটর ডাল [ Motor Dal, Split Peas ]
মটর ডাল [ Motor Dal, Split Peas ]

প্রণালী: মটর ডালের বড়ি আগুনে মোটামুটি বাদামি রং করে পুড়িয়ে রাখো। ভাতের ভেতর কাপড় বেঁধে বা ভাতের ফেন ঢেলে কিছুক্ষণ সিদ্ধ করে ফেন ঝরিয়ে রাখো। কাঁচালঙ্কা, নুন ও ভাল সরষের তেল দিয়ে চটকে মাখো। তেল একটু বেশি দিলে স্বাদ ভাল লাগে।

মুসুর ডাল সিদ্ধ

মসুর ডাল [ Lentil ]
মসুর ডাল [ Lentil ]

৫০-৬০ গ্রাম আস্ত মুসুর ডাল, কাঁচালঙ্কা, নুন, পেঁয়াজকুচি, সরষের তেল। প্রণালী: পরিষ্কার করে ধুয়ে কাপড়ে বেঁধে, ভাতের ভেতর ছেড়ে মুসুর ডাল সিদ্ধ করো। কাপড় সুদ্ধ একবার তুলে দেখো সিদ্ধ হয়েছে কিনা। যদি সিদ্ধ না হয়, তা হলে আরও কিছুক্ষণ সিদ্ধ করো। ডাল একদম গলবে না। কেবল সিদ্ধ হবে। কাপড়সুজ তুলে থালায় রেখে থালা কাত করে রাখো। সব জল ঝরে গেলে এবং কিছু ঠাণ্ডা হলে কাপড় টিপে আরও জল ফেলে দাও। কাপড়টার বাঁধন খুলে ডাল বার করে একটি বাসনে রাখো। নুন, তেল, কাঁচালঙ্কার কুচি এবং পেঁয়াজকুচি দিয়ে মেখে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করো।

মানকচু সিদ্ধ

উপকরণ: যে মানে গলা ধরে না এমন মানের ওপরের অংশ (মুখ) কিছুটা, কাঁচালঙ্কা ও এক চিমটি নুন, মিহি সরষেবাটা বড় ১ চামচ, কাঁচালঙ্কা ২-১টি, পরিমাণ মতো নুন, তেল, নারকেলকোরা বড় ১ চামচ।

মানকচু [ Alocasia macrorrhizos ]
মানকচু [ Alocasia macrorrhizos ]

প্রণালী: মানের পাতার দিকের অংশ এক টুকরো, মোটা করে খোসা ফেলে মাঝখানে ২-৩ ফালা করে এক মাথা জোড়া রেখে কাটো। জল গরম হলে ভাতের জলে মানের টুকরোটি ছাড়ো। ২-৪ মিনিট পরে ভাতের চাল ছাড়ো। ভাত সিদ্ধ হবার আগে হাতা দিয়ে তুলে দেখো মান সিদ্ধ হয়েছে কিনা। যদি খুব সিদ্ধ হয়ে থাকে, তুলে ফেলো, না হলে ভাতের সঙ্গে একসঙ্গেই নামাবে। ভাত থেকে তুলে মানের টুকরোটি একটু ঠাণ্ডা হলে ভাল করে চটকে, নুন, তেল, কাঁচালঙ্কা, সরষেবাটা, নারকেলকোরা দিয়ে মাখো।

মোচা সিদ্ধ

উপকরণ: মোচার ঘণ্টের জন্যে মোচা কেটে নেওয়ার পরে ভেতরের যে সাদা ও নরম অংশ থাকে তা ১টি, নুন ও আধখানা কাঁচালঙ্কা দিয়ে মিহি সরষেবাটা মাঝারি ১ চামচ, পরিমাণ মতো নুন, ভাল সরষের তেল, কাঁচালঙ্কা।

কলার মোচা [ Banana Flower ]
কলার মোচা [ Banana Flower ]

প্রণালী: মোচার ভেতরের সাদা অংশের ওপরের ছুঁচোলো দিক ইঞ্চি খানেক কেটে ফেলে দাও। মাঝখানে চিরে চার ফালা করো। ফেন না ফেলে এই ফেনের মধ্যে মোচাটি দাও। সামান্য নুন দিয়ে সিদ্ধ বসাও। টিপে দেখো, সিদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে ফেন থেকে তুলে রাখো। ঠাণ্ডা হলে হাত দিয়ে খুব ভাল করে চটকে নুন, তেল ও রুচি মতো কাঁচালঙ্কার কুচি দাও। সব শেষে সরষেবাটা মেখে ঢেকে রাখো। ভাতের পাতে প্রথমে খেতে দিয়ো। সরষের বেশ সুন্দর স্বাদ ও ঝাঁজ মিশে খেতে ভাল হবে।

লাউ ডগা সিদ্ধ

লাউ ডগা
লাউ ডগা

উপকরণ: লাউ ডগা এক আঁটি, নুন, তেল, এক-আধটা কাঁচালঙ্কা। প্রণালী: বাজার থেকে টাটকা দেখে এক আঁটি লাউ ডগা আনো বা নিজেদের লাউ গাছ থাকলে ১টি বা ২টি ডগা কেটে আনো। লাউ ডগার নরম অংশ যতটা পাওয়া যায়, কচি পাতাসহ ৭-৮ আঙুল আন্দাজ লম্বা করে কেটে ডুমো করো। ডাঁটা থেকে পাতলা ছিলকা বঁটি দিয়ে টেনে ফেলে দাও।

একদম ওপরের ছোট্ট মঞ্জুরীটি ফেলে দাও। এই অংশে অনেক সময় পোকা থাকে। ডগাগুলো পরিষ্কার করে ধুয়ে একসঙ্গে আঁটি বাঁধো বেশি ভাত হলে, ভাতের জল গরম হয়ে গেলে চাল ছাড়বার আগে লাউ ডগার আঁটি ছাড়ো। একবার ফুটলে চাল ছাড়ো। কিছুক্ষণ পর আঁটি তুলে দেখো ডগা নরম হয়েছে কিনা।

নরম হওয়া মাত্রই পাতাগুলি সিদ্ধ ভাতের সঙ্গে মিশে যায়। ভাতে না দিয়ে ভাতের ফেনেও সিদ্ধ করতে পারো। বেশি ভাত না হলে লাউ ডগাতে ভাতের রং সাদা থাকে না। বেশি ভাত হলে, জল বেশি পড়ার জন্যে ভাতের রং তত খারাপ হয় না। বেশি করে তেল, পরিমাণ মতো নুন ও ইচ্ছা হয়তো সামান্য কাঁচালঙ্কা টিপে আস্তে আস্তে করে মাখো।

দ্রষ্টব্য: উপরিউক্ত প্রণালীতে লাউ ডগা সিদ্ধ করে, পোস্তবাটা, নুন, তেল, কাঁচালঙ্কা দিয়ে মেখেও খেতে ভাল লাগে।

হেলেঞ্চা সিদ্ধ

উপকরণ: হেলেঞ্চা প্রয়োজন মতো ২-১ আঁটি, নুন, তেল। প্রণালী: হেলেঞ্চা বেছে ওপরের দিকে কচি ডগা ৪-৫ আঙুল পাতা সুদ্ধ কেটে রাখো। সব বাছা হলে পরিষ্কার জলে ধুয়ে একটি মোটা সুতো দিয়ে বেঁধে ভাতের ফেনে দিয়েই সিদ্ধ করো। ভাতে সিদ্ধ করলে ভাতের রং খারাপ হয়ে যায়। ডাঁটা টিপে দেখো, নরম হয়ে থাকলে ফেন ফেলে দাও। ঠাণ্ডা হলে সুতো খুলে নুন ও তেল মেখে ভাতের সঙ্গে প্রথমেই দাও। এই সিদ্ধ একটু তেতো স্বাদের হয়, কিন্তু খেতে ভাল।

সাদা বা মাজা তিলবাটা সিদ্ধ

উপকরণ: সাদা তিল বা কালো তিল, মাজা (খোসা ফেলা) ৫০ গ্রাম বা কম-বেশি, নুন, কাঁচালঙ্কা, ভাল ঘি, প্রয়োজনে এক টুকরো কচি কলাপাতা।

প্রণালী: তিল পরিষ্কার করে ধুয়ে জল হেঁকে নাও। তিল শিলে খুব মিহি ও শুকনো শুকনো করে বেটে রাখো। কলাপাতাটি ধুয়ে একটি থালায় পেতে তিলবাটা রেখে চারদিক থেকে মুড়ে চারকোনা করে সুতো দিয়ে বেঁধে রাখো। ফুটন্ত ভাতে কলাপাতায় বাঁধা তিলবাটা ছাড়ো। ভাতের ফেন গালবার আগে পাতায় বাঁধা তিলবাটা পাতাসুদ্ধ তুলে রাখো। একটু ঠাণ্ডা হলে, পাতা খুলে, তিলবাটা বার করে ঘি, নুন ও সামান্য কাঁচালঙ্কা মেখে ভাতের সঙ্গে খেতে দাও। ভাল লাগবে।

`ভিন্ন প্রণালী: পাতায় না বেঁধে, ভাত সিদ্ধ হয়ে গেলে নামাবার সামান্য আগে তিলবাটা ২-৩টি মুঠো বেঁধে ভাতে ছাড়ো। ফেন গেলে একটু পরে খুব সাবধানে ভাতের ভেতর থেকে তিলের ডেলাগুলো বার করে নুন, ঘি দিয়ে মাখো। ভাতের ভেতর ডেলাগুলো দিলে অনেক সময় ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু কলাপাতায় বেঁধে দিলে সে ভয় আর থাকে না।

আরও পড়ুন:

3 thoughts on “সিদ্ধ খাবারের এর যত পদ”

Leave a Comment