ভাজা খাবারের ১০ টি আইটেম

ভাজা খাবারের ১০ টি আইটেম : ভাজা খাবারের এর যত পদ নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে রেনুক দেবী চৌধুরীর নাম। তিনি তার বই “রকমারি নিরামিষ রান্না” নামক বইতে খুবই চমৎকার করে লিখেছে – কয়েকটি সিদ্ধর কথা লিখছি। এ ছাড়াও অনেক তরকারি পছন্দ মতো সিদ্ধ করে নানারকম ভাবে মেখে মুখরোচক করে খাওয়া যায়।

ভাজা খাবারের ১০ টি আইটেম - Chef

ভাজা খাবারের ১০ টি আইটেম:

ভাজা করতে হলে সাধারণত বেশি তেলে ভাজতে হয়। কিন্তু তেল অবশ্য শেষে বেঁচে যায়। এই ভাজার তেলে পরে অন্য রান্না করা চলবে। ভাজা সব শেষে করতে হয়। তা হলে মচমচে ও গরম থাকে, খেতেও ভাল হয়। ‘আগে অম্বল পরে ভাজা, সেই হল রাঁধুনির রাজা’ এই কথাটি ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। আগে অম্বল রাঁধবে। অম্বল, চাটনি ঠাণ্ডা হলেই ভাল, আর ভাজা গরম গরমই খেতে ভাল। ভাজা: যেমন আলু ভাজা, মান ভাজা, বড়ি ভাজা ইত্যাদি ভাজা ভাসা, ছাঁকা তেলে

মচমচে করে ভাজা হয়। পাটভাজা বা পোরেভাজা: বেসন বা ময়দার গোলায় ডুবিয়ে ভাসা তেলে মচমচে ভাজা। বড়া:

১) ফুল, পাতা বা অন্য কোনও জিনিস দিয়ে তৈরি হয়। ময়দা বা আটার গোলা মাখা মাখা করে মেখে, ভাসা তেলে বড়ার আকারে ভাজা।
২) শক্ত জিনিস, যেমন আলু, কচু, মান, ডালবাটা ইত্যাদি সিদ্ধ করে চটকে চালের গুঁড়ো বা আটা, ময়দা মেখে ভাসা তেলে বড়ার আকারে মচমচে করে ভাজা। ভেজানো ডালবাটা ও সিদ্ধ ডাল দুই দিয়েই বড়া করা চলে।

আলুর পাতলা ঢাকা ভাজা

উপকরণ: নতুন আলুই ভাজতে ভাল। নতুন আলু প্রয়োজন মতো কয়েকটি, নুন, তেল।

কাটা আলু ভাজার কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে [ Frying Potatoes ]
কাটা আলু ভাজার কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে [ Frying Potatoes ]

প্রণালী: আলুর খোসা ছাড়িয়ে প্রায় কাগজের মতো পাতলা গোল চাকা করে কেটে জলে ফেলো। সব চাকা সমান পাতলা হওয়া চাই। দরকার মতো আলু কাটা হয়ে গেলে, জল বদলে ২-৩ বার ধুয়ে জল ঝরিয়ে থালায় রেখে থালা একদিকে উঁচু করে রাখো। জল যা আছে ঝরে ঢালু জায়গায় আসবে। উনুনে কড়ায় বেশি করে তেল চড়াও। তেল ভাল তাতলে নুন মেখে অল্প করে আলু ছাড়ো। খুক্তি দিয়ে নাড়াচাড়া করো। আলু বেশ ঝরঝরে হয়ে এলে আঁচ কমিয়ে দাও। অথবা কড়া নামিয়ে নামিয়ে ভাজো।

নাড়াচাড়া করতে করতে মচমচে হয়ে এলে ঝাঁজরি হাতা দিয়ে তেল থেকে ছেঁকে তুলে থালায় রাখো। ভাজার রং সাদা বা সামান্য হলুদ আভা হবে, লাল হবে না। মচমচে হবে। একসঙ্গে বেশি দিলে ভাল ভাজা হয় না। এইভাবে নানা আকারে আলু পাতলা পাতলা করে কেটে মচমচে ভাজা দেখতে আর খেতেও ভাল।

আলুর ঝুরি ভাজা

উপকরণ: এক মাপের টাটকা নতুন আলু (হিম ঘরের আলু ভাজা ভাল হয় না), বেশি পরিমাণে তেল, পরিমাণ মতো নুন।

ঝুরি আলু ভাজা
ঝুরি আলু ভাজা

প্রণালী: আলু ছাড়াও। প্রথমে পাতলা চাকা কেটে, আবার ওই চাকাকে সরু সরু করে কেটে জলে ফেলো। সব আলু কাটা হয়ে গেলে ২-৩ বার জল বদলে আলু ধুয়ে জল ফেলে আলু জলশূন্য করে রাখো। উনুনে কড়ায় বেশি করে তেল দাও। তেল তাতলে নুন মাখিয়ে কাটা আলু ছাড়ো। তাড়াতাড়ি নেড়ে দাও। প্রথমে কড়া আঁচ লাগবে, তা না হলে আলু ডেলা হয়ে যাবে। নাড়তে নাড়তে আলু ঝরঝরে এবং মচমচে হয়ে গেলে, তেল ছেঁকে তোলো। আবার এক খোলা দাও, এবং এইভাবেই ভাজো। আলু পুড়বে না, রং প্রায় সাদাই থাকবে। দেখতে আর খেতেও ভাল।

আলুর সুতো ভাজা

উপকরণ: নতুন নৈনিতাল আলু, লঙ্কা আচারের কয়েকটি, নুন, তেল বা ডালডা। প্রণালী: আলুর খোসা ছাড়িয়ে জলে ফেলো। সব আলু ছাড়ানো হয়ে গেলে আলু ধুয়ে তোলো। আবার একটি পাত্রে জল নাও। আলুর দুই মাথা কেটে বাদ দাও। এখন আলুর মাঝের অংশ পাতলা করে ফিতের মতো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সাবধানে কেটে নাও। আলু প্রায় সবটা কাটা হয়ে গেলে একটি ফিতের মতো দেখাবে। এখন এই ফিতে আবার আলুর আকারেই ভাল করে গুটিয়ে নাও। আলু শক্ত করে চেপে ধরে, একদিকের মাথা থেকে খুব পাতলা চাকা চাকা কেটে জলে ফেলতে থাকো। খুব সাবধানে কাটতে হবে, না হলে চাকাগুলো ভাল কাটা হবে না।

আলু ভাজা [ Frying Potatoes ]
আলু ভাজা [ Frying Potatoes ]

ভাসা জল থেকে আলুর চাকাগুলো সাবধানে তুলে থালায় রাখো। সুন্দর সুতোর মতো লম্বা লম্বা দেখাবে। দরকার মতো কেটে নিয়ে ২-৩ বার সাবধানে জল বদলে ধুয়ে নাও। আলুর সুতো টুকরো না হয়। কড়ায় বেশি করে তেল বা ডালডা দাও (ডালডা দিলে রং বেশি সাদা হবে)। ডালডা বা তেল বেশ তাতলে নুন মেখে অল্প অল্প করে আলুর সুতো ছাড়ো। কাঠি দিয়ে গোল করে নাও। ঝরঝরে হয়ে উঠলে আঁচ কমিয়ে দাও। মচমচে হয়ে উঠলে ঝাঁজরি হাতা দিয়ে সাবধানে ছেঁকে তোলো। অল্প অল্প করে ভাজতে হবে। এই ভাজায় রং সাদা থাকাই দরকার।

আলুর খোসার ঝুরি ভাজা

ফেলে দেওয়া জিনিস কাজে লাগাও। খোসা অনেকেই পাতলা করে ছাড়াতে পারে না। যে আলুর খোসা মোটা করে ছাড়ানো হয়েছে, সেই খোসা ফেলে না দিয়ে সেই খোসাগুলো সরু সরু করে কেটে ভাসা জলে ২-৩ বার পরিষ্কার করে ধুয়ে একদম জল ঝরিয়ে নাও। বেশ ঝরঝরে হয়ে গেলে একটি থালায় রেখে খোসাকুচিগুলির ওপর ময়দা মাখিয়ে বেশ ঝরঝরে করে রাখো। ভাজবার সময় পরিমাণ মতো নুন মাখিয়ে নিতে ভুলবে না।

উনুনে কড়ায় তেল চড়াও। (বেশি তেল লাগে না)। তেল তাতলে ময়দা মাখা খোসা কুচি তেলে দাও। সমান সমান তেল থাকলেই হবে। খুস্তি দিয়ে নেড়েচেড়ে মচমচে করে ভেজে নাও। এক খোলা ভেজে নিয়ে আবার আরেক খোলা দাও। অল্প অল্প করে ভাজলেই ভাল হয়। খেতেও ভাল।

আলুর খোসা ভাজা

আলুর খোসা ছাড়ানোর সময় যদি খোসার সঙ্গে আলুও চলে যায়, তবে সেই খোসা না ফেলে জলে পরিষ্কার করে ধুয়ে জল চিপে আলুর খোসায় সামান্য আটা, ময়দা বা চালবাটা, পরিমাণ মতো নুন ও অল্প পোস্ত দিয়ে মাখামাখা করে রেখে অল্প তেলে কড়ায় বড়ার মতো পাতলা পাতলা করে সাজিয়ে দাও। এক পিঠ শক্ত হলে অন্যপিঠ উল্টে দাও। দুই পিঠ বেশ লাল হলে, কড়া থেকে নামিয়ে আবার অন্য বড়াগুলি তেলে দাও। এই খোসা ভাজা বেশ মচমচে হয়, আর পোস্ত থাকার জন্য স্বাদ ভাল হয়।

আলুর পোরে ভাজা

উপকরণ: আলু, পেঁয়াজকুচি, মিহি কাঁচালঙ্কাকুচি, পরিমাণ মতো নুন, বেসন, তেল। প্ৰণালী: আলু কিছু সিদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে গোল-গোল চাকা করে কেটে রাখো। বেসনে সামান্য ময়ান দিয়ে জল দিয়ে, বেসন ভাল করে ফেটিয়ে নুন, পেঁয়াজকুচি ও লঙ্কাকুচি মিশিয়ে গোলা করো। উনুনে কড়ায় তেল চড়াও। তেল তেতে গেলে বেসনের গোলায় আলুর চাকা একটি একটি করে চুবিয়ে তেলে ছাড়ো। লাল করে ভেজে চায়ের সঙ্গে পরিবেশন করো।

আস্ত করলা ভাজা

উপকরণ: বেশ পুষ্ট ও মাঝারি আকারের করলা ৫-৬টি, কাঁচালঙ্কা ২-৩টি, রসুন আধখানা, পেঁয়াজ বড় ১টি, আদা ১ ইঞ্চি পরিমাণ, ধনে ১ চা-চামচ, জিরে ১ চা-চামচ, পুদিনা কিছু, পাকা তেঁতুল টকের পরিমাণ মতো, পরিমাণ মতো নুন, তেল, কিছুটা সুতো।

প্রণালী: করলার ওপরের ছোট ছোট গুটিগুলো ছুরি দিয়ে কিছুটা চেঁছে নিয়ে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখো। লম্বাভাবে মাঝের অংশ খানিকটা চিরে ভেতর থেকে সাবধানে বিচি বার করে ফেলো। পেঁয়াজ কুচি করো। রসুন কুচি করো। কাঁচালঙ্কা কুচি করো। ধনে, জিরা, পুদিনা ও পাকা তেঁতুল একসঙ্গে বেটে রাখো। কড়ায় অল্প তেল দাও। পেঁয়াজ ও রসুন কুচি ছাড়ো।

একটু ভাজা ভাজা হলে লঙ্কাকুচি দাও। মশলাবাটা দিয়ে নাড়তে থাকো। নুন ও মিষ্টি দাও। ভাজা মশলার জল শুকিয়ে ডেলা মতো হয়ে এলে নামিয়ে প্রতিটি করলার ভেতরে সমান করে ভরে সুতো দিয়ে ভাল করে বাঁধো। সবগুলো মশলা ভরা ও বাঁধা হয়ে গেলে, তেলে লাল করে ভেজে খেতে দাও।

উচ্ছে বা করলা ভাজা

উপকরণ: উচ্ছে বা কচি করলা কয়েকটি, নুন, তেল। প্ৰণালী: কচি উচ্ছে বা করলাই ভাল হয়। জলে ধুয়ে উচ্ছে করলা বেশ পাতলা চাকা করে কেটে নুন মাখাও। কড়ায় তেল চাপাও। তেল ভাল তাতলে, তেলের পরিমাণ মতো উচ্ছে বা করলা চাকা ছাড়ো। উল্টেপাল্টে লাল মচমচে করে ভেজে তোলো। আবার অন্য এক খোলা ছাড়ো। এইভাবে ভাজো। খেতে মুখরোচক।

কচি কুমড়োর পাটভাজা

উপকরণ: খুব ছোট কচি চালকুমড়ো ১টি, ময়দা ১০০ গ্রাম মতো, পরিমাণ মতো নুন, সামান্য হলুদবাটা, কালোজিরে চা-চামচ, তেল, সামান্য লঙ্কাবাটা।

প্রণালী: কচি কুমড়োটি কাঁটা বা ওই জাতীয় কোনও জিনিস দিয়ে ভাল করে ছিদ্র ছিদ্র করে ও খুঁচিয়ে নাও। খুব ভালভাবে খুঁচিয়ে একটু নুন মাখিয়ে রাখো। ময়দায় বেশ করে তেলের ময়ান দিয়ে মাখো। পরিমাণ মতো নুন দাও। কালোজিরে দাও। হলুদবাটা, লঙ্কাবাটা ও জল দিয়ে বেশ ঘন গোলা করে ভাল করে ফেটাও। এখন খোঁচানো কুমড়ো যতটা সম্ভব চিপে জল ফেলে দিয়ে, গোল-গোল বা লম্বায় আধখানা করে পাতলা চাকা করে কেটে নাও। ছোট কড়াতে একটু বেশি তেল দাও।

তেল গরম হলে, ফেটানো গোলাতে একটি একটি কুমড়োর চাকা চুবিয়ে গরম তেলে ছাড়ো। বেশ ফুলে উঠবে। লাল মচমচে করে ভেজে গরম গরম পরিবেশন করো।

গোলাটি খুব ঘন পাতলা হবে না। কুমড়োর চাকার গায়ে ভালভাবে লাগবে, গোলা সেই রকম হবে। চারিদিকে মচমচে, ভেতরটা নরম, খেতে খুব মুখরোচক।

কলাই ডালের বড়া

উপকরণ: কলাই ডাল ৫০ গ্রাম, মিহি চালের গুঁড়ো বা মিহি চালবাটা, বাটা কলাই ডালের ভাগ চালবাটা গুঁড়ো, আদাবাটা মাঝারি আধ চামচ, মৌরি ১ চা-চামচ, কাঁচা লঙ্কাবাটা বা শুকনো লঙ্কাবাটা ঝালের রুচিমতো, এক চিমটি হিং গুঁড়ো, পরিমাণ মতো নুন, তেল।

প্রণালী: আগের রাতে ডাল ভিজিয়ে পরদিন সকালে পরিষ্কার করে ধুয়ে মিহি করে বেটে নাও। বাটা ডালে আদাবাটা, মৌরি, লঙ্কাবাটা হিং গুঁড়ো দিয়ে খুব ভাল করে ফেটাও, যখন বেশ হালকা হবে তখন চালবাটা চালের গুঁড়ো পরিমাণ মতো নুন দিয়ে আবার ফেটিয়ে রাখো। উনুনে কড়ায় বেশি করে তেল দাও। তেল তাতলে ছোট ছোট বড়ার আকারে তেলে ছাড়ো। লাল হয়ে এলে উল্টে দাও। বেশ উল্টোপাল্টা করে মাঝারি আঁচে ভাজো। মচমচে ও লাল রঙের বড়া হবে। গরম গরমই খেতে ভাল।

আরও পড়ুন:

2 thoughts on “ভাজা খাবারের ১০ টি আইটেম”

Leave a Comment